কমলো তেলের দাম, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
আন্তর্জাতিক বাজারে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে পৌঁছেছে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের দাম। অথচ দেশের বাজারে ভোক্তাদের তা কোনোভাবেই স্বস্তি দিচ্ছে না। দাম বাড়ানোর পেছনে ব্যবসায়ীরা দায় দিচ্ছেন টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং জটিলতা ও শুল্ক পুনর্বহালের। তবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, এগুলো নিছক অজুহাত; প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা লিটারে অন্তত ১২ টাকা লাভ করছেন।
বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১,৬৬৭ ডলার, যা ২০২৪ সালে এসে কমে দাঁড়ায় মাত্র ১,০২২ ডলারে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চে এ গড় আরও কমে ১,০৪০ ডলার হয়। একই ধারা পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে।
পাম অয়েল: ২০২২ সালে গড় দাম ১,২৭৬ ডলার → ২০২৪ সালে ৯৬৩ ডলার
সয়াবিন বীজ: ২০২২ সালে ৬৭৫ ডলার → ২০২৪ সালে ৪৬২ ডলার
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে প্রতি কেজি অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের শুল্কায়ন মূল্য ছিল গড়ে ১৩৬ টাকা। পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় ২০ টাকা, কর-ভ্যাটসহ মোট খরচ দাঁড়ায় ১৭৭ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম ১৮৯ টাকা। এই হিসাবে, প্রতি লিটারে ব্যবসায়ীরা অন্তত ১২ টাকা মুনাফা করছেন।
দেশের ভোজ্যতেল বাজার এখন মূলত পাঁচটি বড় শিল্পগ্রুপের দখলে: মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড ও স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস। ক্যাবের হিসাব বলছে, এরা আমদানি করা তেলের প্রায় ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
২০২৪ সালে দেশে প্রায় ৩২ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৭ লাখ টন বেশি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিকারকরা ইচ্ছাকৃতভাবে এসও (সরবরাহ আদেশ) কমিয়ে দিয়েছেন, আবার যেসব এসও রয়েছে, তার পণ্যও সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে বাজারে তেলের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে এবং ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে।
২০২৪ সালে অন্তত পাঁচবার ভোজ্যতেলের দাম ওঠানামা করেছে, যার বেশির ভাগই শুল্ক ছাড় বা পুনর্বহালের সঙ্গে জড়িত। যেমন, চলতি বছরের ৩১ মার্চ শুল্ক ছাড় শেষ হওয়ার পর সরকার প্রতি লিটারে ১৪ টাকা দাম বাড়ানোর অনুমোদন দেয়।
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেন। কিন্তু দাম বাড়লে মুহূর্তেই কার্যকর করেন। এটা ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।”
Comments
Post a Comment